মিজানুর রহমান আজহারীর লেখা বই সমূহ |  All books written by Dr. Mizanur Rahman Azhari

মিজানুর রহমান আজহারীর লেখা বই সমূহ | All books written by Dr. Mizanur Rahman Azhari

মিজানুর রহমান আজহারীর পরিচয়

মিজানুর রহমান আজহারী একজন বাংলাদেশি জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা, ধর্ম প্রচারক ও লেখক। তিনি ২৬ জানুয়ারি ১৯৯০ ঢাকার ডেমরায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস কুমিল্লার মুরাদনগরের পরমতলা গ্রামে। তার বাবা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক ও মা গৃহিণী। তিনি ছোট বেলায় ডেমরার বিক্ষাত দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। পরে সেখান থেকে বিশ্ববিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পান এবং মিশরে চলে যান।

আল আজহার ইউনিভার্সিটির তাফসির অ্যান্ড কুরআনিক সাইন্স ডিপার্টমেন্ট থেকে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন। আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার কারণে তার নামের সাথে ‘আজহারী’ উপাধি যুক্ত হয়। পরবর্তীতে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া-এর ডিপার্টমেন্ট অব কুরআন অ্যান্ড সুন্নাহ স্টাডিজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষে সেখানেই পিএইচডি গবেষণা করেন এবং বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়া তেই অবস্থান করছেন।

তিনি অন্যান্য বাংলাদেশি বক্তাদের চেয়ে ভিন্ন ধারায় ওয়াজ করে থাকেন। ইসলাম ধর্মের অনুশাসন মেনে চলেও নিজেকে কিভাবে স্মার্টভাবে উপস্থাপন করা যায়, তা মিজানুর রহমান আজহারী দেখিয়ে দিয়েছেন। তার সুন্দর বাচন ভঙ্গি, কথার মধ্যে ইংরেজি ভাষার ভারসাম্য পূর্ণ সংমিশ্রণ এবং কোরআন ও হাদিসের আলোকে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে তিনি খুব অল্প সময়ে বাংলাদেশে অভাবনীয় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।

বিশেষ করে তিনি মুসলিম তরুণ সম্প্রদায় এর মধ্যে একজন আইডল হিশেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষ্ম হয়েছেন। তার মাহফিলে প্রায়শই বিভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষদের তার মাধ্যমে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে দেখা যেত। তার তাফসির মাহফিলে সাধারণ মুসলিমদের ব্যাপক জনসমাগম দেখা যেত যাদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণসমাজ।

তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মধ্যে তার একটি অফিসিয়াল ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ এবং তার নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে।

তার এই ইউটিউব চ্যানেল খুবই অল্প সময়ে ১ মিলিয়ন এর মাইলফলক অতিক্রম করেছিল যা একটি রেকর্ড ছিল। এ থেকে তার জনপ্রিয়তা সম্পর্কে কিছুটা অনুমান করা যেতে পারে।

বর্তমানে তিনি মাঠে ময়দানে ওয়াজ - মাহফিল করা থেকে বিরত আছেন। তবে তিনি বিভিন্ন সময় সভা, সেমিনার করে থাকেন এবং সেগুলো তার সোশ্যাল মিডিয়ায়, ইউটিউব চ্যানেলে পোষ্ট করেন। এছাড়াও নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন ইসলামিক বিষয় নিয়ে গঠন মূলক ভিডিও আলোচনা পোষ্ট করে উম্মার খেদমত করে যাচ্ছেন।

ম্যাসেজ

ড. মিজানুর রহমান আযাহারী অনেকরই একজন প্রিয় বক্তা। উনার আলোচনা আমরা অধিকাংশ মানুষই শুনেছি। শ্রোতাদের তার কাছ থেকে একটি বই এর প্রত্যাশা ছিল অনেক আগে থেকেই। লাখো পাঠকদের সেই আকাঙ্কা থেকেই তিনি এই বইটি তার সকল শুভাকাঙ্ক্ষী ও শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন। এই বইটির মাধ্যমে তিনি মুলত মুসলিমকে জাতির কাছে কিছু ম্যাসেজ দিতে চেয়েছেন।

ম্যাসেজ - ড. মিজানুর রহমান আযাহারী

"ম্যাসেজ" বইটি মুলত ইসলামি আদর্শ অনুসারে আধুনিক মননে দ্বীনের ছোঁয়া লাগাতে তৈরি হয়েছে। বইটিকে তিনি তরুণদের উপযোগী করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। বইটির কভার পেজেই লিখা আছে you have 12 unread messages যা পাঠককে অত্যন্ত আকৃষ্ট করবে এবং এটি বইটির উদ্দ্যেশ্য পাঠকদের কাছে স্পষ্ট করে দেবে। বইটিতে লেখক ১২ টি ভিন্ন অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ১২ টি বিষয় তুলে আনার চেষ্টা করেছেন।

বইটির প্রথম অধ্যায়ের মধ্যে তিনি কুরআনের প্রথম সুরা, সুরা ফাতিহা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমরা নামাযে প্রতি রাকাত সূরা ফাতিহা পড়ি সেটা হোক ফরয, সুন্নত কিংবা নফল। আবার কুরআন তিলাওয়াত করার সময়ও প্রথমে সূরা ফাতিহা পড়ি। কিন্তু কখনও কি আমরা ভেবে দেখেছি - কি আছে এই সূরাতে?, কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই সূরা? সূরা ফাতিহার গুরুত্ব, তাৎপর্য খুব সাবলীল, সহজ ও বোধগম্য উপায়ে এই বইটির প্রথম অধ্যায়ে তুলে ধরেছেন আমাদের সকলের প্রিয় লেখক।

এরপর তিনি এক একটি অধ্যায়ে মানুষের জিবন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমনঃ মানুষের ভাগ্য, ভাগ্য যে নির্ধারিত, মানুষের জিবনে দোয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ, দোয়া কিভাবে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে, রাগ মানব জিবনে কতটা ক্ষতিকর, কিভাবে জীবন যাপন করলে দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তি লাভ করা যাবে, কিভাবে সন্তান লালন-পালন করলে আমাদের সন্তানেরা দ্বীনদার ও নেককার হবে, মুসলমানদের জীবনে মসজিদ কতটা গুরুত্ব বহন করে ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

সর্বশেষ তিনি প্রত্যেক প্রানীর জীবনের অবধারিত বিষয় মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করেছেন। বইটিতে লেখক কুরআন সুন্নাহর উদ্ধৃতি, সাহাবিদের বক্তব্য, বিভিন্ন শিক্ষণীয় ঘটনা, ক্ল্যাসিক্যাল ও আধুনিক স্কলারদের রেফারেন্সের পাশাপাশি লেখকের নিজস্ব একান্ত কিছু চিন্তা ভাবনা নিয়ে তুলে ধরেছেন।

এছাড়াও বইটিতে মিজানুর রহমান আযাহারী উনার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গাই করা আলোচনা গুলোর মধ্য থেকে কিছু বিশেষ আংশ খুব সুন্দর ও গোছালোভাবে উপস্থাপন করেছেন।

বইটির ভাষা বিন্যাস এমন ভাবে সাজানো হয়েছে, যেন সকল শ্রেণির পেশার মানুষ পড়তে স্বস্তি বোধ করে। বইটিতে আরবি টেক্সট কমিয়ে আয়াত ও হাদিসের বাংলা অর্থ বেশি ব্যবহৃত হয়েছে যাতে করে তা সাধারণ মানুষের জন্য সহায়ক হয়।

বর্তমানে আমাদের সব কিছুর জন্য সময় আছে অথচ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য কোন সময় থাকে না। মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে মোবাইল চালাই কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাজ তো দুরের থাক ফজরের আযানটাও শোনার চেষ্টা করি না।

আমাদের এই লাগামহীন জীবনকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে আনতে ও ইসলামী পন্থায় জিবন পরিচালনা করতে এই বইটি আমাদের সহায়ক হবে ইনশা আল্লাহ। তাই আমাদের প্রত্যেকের বইটি অন্তত একবার পড়া উচিত। হয়তো এ বইটি আমাদের ইহকাল -পরকালের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।



আহ্বান

আল্লাহ তাআলা পৃথিবীকে সাজিয়েছেন অপরূপ নৈপুণ্যে। চারদিকে যেদিকেই তাকানো যায় আল্লহর সৃষ্টির সৌন্দর্য চোখে পড়ে। আল্লহর এসব অতুলনীয় সৃষ্টি ও সৌন্দর্যের এক পর্যালোচনা হাজির করেছেন মিজানুর রহমান আজহারি।

আহ্বান - ড. মিজানুর রহমান আযাহারী

সেইসঙ্গে তরুণ প্রজন্মের সামনে পেশ করার চেষ্টা করেছেন সুস্থ-সুন্দর, সময়োপযোগী ও ঈমানদীপ্ত জীবনের নববি চালচিত্র এবং আহ্বান করেছেন গৌরবময় সত্যের পথে। আটটি অধ্যায় সংবলিত ২৫৫ পৃষ্ঠার এই বইয়ে জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার মিজানুর রহমান আজহারী তাঁর পাঠকদের দেয়ার চেষ্টা করেছেন সম্পূর্ণ নতুন বার্তা।

বিশাল এই বইয়ের প্রতিটি বিষয়ে আলাপ করতে চাইলে তা বিশাল স্বতন্ত্র একটি আর্টিকেল এর দাবী রাখে।

তবে অল্প কথায় বলতে গেলে-

বইটির শুরুতেই লেখক আমরা কিভাবে জাগতিক কাজের মাঝে আল্লাহর কাছ থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি, বেমালুম ভুলে গিয়েছি মহান রবকে তা তুলে ধরেছেন এবং কিভাবে রবের কাছে আসতে পাড়বো তার উপায় বলার চেষ্টা করেছেন।

আমাদের শরীর ও মন ভালো না থাকলে আমরা কাজ করতে পারব না, কাজের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হবে। এমনকি ইবাদাতেও মনোযোগ আসবেনা। নিয়মিত শরীরচর্চা ও খাদ্যভ্যাসের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কিভাবে সুস্থতা অর্জন করা যায় তা দেখানো হয়েছে। এরপর তিনি স্বামী-স্ত্রী কিভাবে একে অপরকে বুঝাবুঝির মাধ্যমে চলে জীবনে সুখি হতে পারে তা তুলে এনেছেন। তাছাড়া সুন্দর পোশাক এবং পর্দার বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে।

এগুলো ছাড়াও মানুষের স্বপ্ন, তরুণরা সমাজে কতট পরিবর্তন আনতে পারে, মানুষের দাম্ভিকতা এবং অহংকারের পরিণতি, সোশ্যাল মিডিয়া এর সঠিক ব্যবহার এর প্রয়োজনীয়তা, কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার হতে পারে পরকালীন জীবনে মুক্তির উসিলা সহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন এই বইয়ের মধ্যে।

বইটির শেষে তিনি আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা কেন গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আল্লাহ মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক। প্রতিটি কাজে আল্লাহর ওপর ভরসা করা যেমন জরুরি তেমনি ভাবে কাজকর্ম না করে শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করলে কোন কাজে ফল আসবেনা সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে এই বইটিতে।

একজন পাঠক বইটি পড়ার মাধ্যমে তার জিবনে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর এক অতুলনীয় সমাধান খুজে পাবে যা তার জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে অনেক বেশি সহায়ক হবে ইন শা আল্লাহ



রিফ্লেকশন ফ্রম সূরা ইউসুফ

একুশে বইমেলা ২০২৩-এ মিজানুর রহমান আজহারীর তৃতীয় বই 'রিফ্লেকশন ফ্রম সূরা ইউসুফ'। কুরআনুল কারিমের অন্যতম একটি সূরা, যেটিকে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন শ্রেষ্ঠ গটনা বা সর্বশ্রেষ্ঠ গল্প। এ গল্প আল্লাহর প্রিয়নবি ইউসুফ (আ.)-এর জীবনের গল্প।

রিফ্লেকশন ফ্রম সূরা ইউসুফ - ড. মিজানুর রহমান আজহারী

কুরআনের গল্প-কাহিনি আর দশটা গল্প-কাহিনির মতো নয় । কুরআনের গল্পে আছে উপদেশ, উপলব্ধি ও জীবনবোধ । কুরআনের একটা নিজস্ব বর্ণনাভঙ্গি আছে। যেটা একেবারেই অনন্য। গল্পে সাধারণত সত্য- মিথ্যার মিশ্রণ থাকে । কিন্তু কুরআনের গল্প এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ৷ কুরআন আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বাণী । তাই এখানে মিথ্যার কোনো অবকাশ নেই ।

একটা গল্প কতটা জীবন্ত হয়ে উঠতে পারে, হতে পারে নান্দনিক, তার বাস্তব প্রমাণ এই সূরা। কানআনের মরুপল্লিতে ছোট্ট ইউসুফ (আ.)-এর বেড়ে ওঠা, শৈশবে ভাইদের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে অন্ধকূপের প্রকোষ্ঠে নিক্ষেপ, মরুর এক কাফেলায় করে মিশরের দাস কেনাবেচার বাজারে বিক্রি হওয়া, ঘটনাচক্রে মিশরের রাজপ্রাসাদের মধ্যে বেড়ে ওঠা, নারীর ছলনার শিকার হয়ে মিথ্যা মামলায় তাঁর কারাবরণ, সেখানেই নবুয়ত লাভ এবং দাওয়াতি মিশনের সূচনা, স্বপ্ন ব্যাখ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠা, দীর্ঘ কারাজীবন শেষে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া এবং রাজদায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেওয়া, কালের বিবর্তনে ইউসুফ (আ.)-এর ভাইদের মিশরে আগমন, দীর্ঘ কয়েক যুগ পর ইউসুফ (আ.) তাঁর পিতা ইয়াকুব (আ.)-এর সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত নানা ঘটনাপ্রবাহের চমকপ্রদ বর্ণনা স্থান পেয়েছে এই অনন্য, অসাধারণ সূরাটিতে। তাঁর নামেই কুরআনুল কারিমের ১২তম চ্যাপ্টার-‘সূরা ইউসুফ’ ।

সূরার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শব্দের গাঁথুনি ও প্রাঞ্জল উপস্থাপন এমনভাবে আনা হয়েছে, যেন অলংকারে মূল্যবান পাথরগুলো বসিয়ে দেওয়া হয়েছে সারিবদ্ধভাবে। এটি এমন একটি কালজয়ী গল্প, যেটির অন্তর্নিহিত শিক্ষা যেকোনো ক্রাইসিস মোমেন্টে আমাদের আত্মাকে করবে প্ৰশান্ত এবং আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়াবে আল্লাহ তায়ালার প্রতি।

এ সূরায় কাহিনির প্লটগুলো ছোটো ছোটো করে এমনভাবে একটার সাথে আরেকটা কানেক্ট করা হয়েছে যে, পাঠক সহজেই ঘটনাপরম্পরা মেলাতে পারবেন। বিরক্ত হবেন না মোটেও।

গল্পের ঘটনাপ্রবাহের নানা দিক যেন আমাদের চারপাশের চেনা জগৎ থেকে নেওয়া হয়েছে বলে মনে হবে, কিন্তু চেনা জিনিসগুলোকে অচেনা করে স্বল্প বাক্যে এমন শৈল্পিক ভঙ্গিমায় কাহিনিটি উপস্থাপন করা হয়েছে, যা প্রতিটি বিশ্বাসীর হৃদয়ে অবশ্যয় সূক্ষ্ম দাগ কাটতে সক্ষম হবে।

এরপর কী? এরপর কী হতে চলল? ইউসুফ (আ.) কি অন্ধকার কূপ থেকে মুক্ত হতে পারবেন? জুলাইখা ইউসুফ (আ.)-কে নিজ বিশেষ গোপন কক্ষে ডেকে নিয়ে কেন দরজাগুলোতে তালা লাগিয়েছিল? এমন একটা কৌতূহলবোধ কাহিনির শেষ অবধি থেকে যাবে, যতক্ষণ না পুরো সূরাটি শেষ করা হয়।

এ গল্প আমাদের জানান দিয়ে যায়-আল্লাহ যদি কাউকে সম্মানিত করতে চান, দুনিয়ার কেউ তার সম্মানহানি করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছে রাজত্ব দান করে থাকেন, তা কারও পছন্দ হোক কিংবা না হোক। বন্দিত্বের শিকল চিরস্থায়ী কোনো বিষয় নয়, বরং এই শিকলই হতে পারে সিংহাসনে আসীন হওয়ার উপলক্ষ্য।

ড. মিজানুর রহমান আজহারি সে বার্তা পাঠক সমীপে তুলে ধরেছেন তাঁর স্বভাবসুলভ নান্দনিক ভঙ্গিমায় । একুশ শতকের জাহেলিয়াত মোকাবিলায় ইউসুফ (আ.)-এর ঘটনাপ্রবাহ উম্মাহকে সন্ধান দেবে সঠিক পথের; বাতলে দেবে অবশ্যকরণীয়।

এই গ্রন্থটি মূলত সূরা ইউসুফের তাফসির। বিশেষ করে সূরার রিফ্লেকশনগুলো পাঠকদের ভাবনার জগতে আলোড়ন তুলবে। জীবন চলার চমকপ্রদ পাথেয় জোগাবে। সর্বোপরি এই আলাপগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের সাথে গল্পটি মেলাতে পারব, ইনশাআল্লাহ।



জেগে ওঠো আবার

একুশে বইমেলা ২০২৪-এ বের হয়েছে শায়খ মিজানুর রহমান আজহারীর নতুন বই 'জেগে ওঠো আবার'। এ বইয়ের মধ্যে আপনি খুঁজে পাবেন রবের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করে তোলার অনুপ্রেরণা। একটু ব্যতিক্রমধর্মী উপস্থাপনার মাধ্যমে লেখক এই বইটিকে কিছুটা ইউনিক করার চেষ্টা করেছেন, যাতে করে লাখো পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায় বইয়ের কথাগুলো।

জেগে ওঠো আবার - ড. মিজানুর রহমান আজহারী

কুরআন এক মহা বিস্ময়ের নাম। দুঃখজনক হলেও সত্য হচ্ছে আমরা অধিকাংশ মানুষ আল-কোরআন পড়তে পারি কিন্তু ব্যাকরণ না জানার কারণে এর অর্থগত সৌন্দর্য, আবেগ-অনুভূতি বুঝতে ও অনুধাবন করতে পারিনা।

আচ্ছা, আপনার মনে কুরআনকে নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পড়ার ইচ্ছে কি কখনো জেগেছে? মানে, কুরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য, ব্যাকরণিক বিষয়গুলো, আগের যুগের ইমামদের ব্যাখ্যা—কিংবা আধুনিক যুগের আয়নায় কুরআন পাঠ, এমন শত বিষয় নিয়ে চিন্তা ভর করেছে কখনো আপনার মাথায়? কুরআন কি মানুষের সাইকোলজি নিয়ে কথা বলেছে? কুরআন কি মানুষের প্রাত্যহিক বিষয় নিয়েও কথা বলে?

আচ্ছা, কুরআন কে নিয়েও কি বসে গল্প করা যায়? এমন প্রশ্ন নিশ্চয়ই হয়ত আপনার মনে হর-হামেশাই ঘুরপাক খায়। আপনার এই সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন ‘জেগে ওঠো আবার’ বইটির পাতায় পাতায়। ঝরঝরে বাংলায়, অনেকটা সাহিত্যের ঢঙয়ে কুরআনকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে শত দৃষ্টিকোণ থেকে। বইটি পড়ার পর আপনি যদি ঢাকার প্রবল জ্যামেও আটকে থাকেন তখনও বাসে বসে বসে আপনি টের পাবেন—কুরআন আপনার সাথে কথা বলছে। অলস দুপুরে পুকুর পাড়ে বসে বসেও আপনি অনুভব করতে পারবেন—কে যেন আপনার কানে কানে কুরআনের কথা শুনিয়ে যাচ্ছে।

আপনার প্রাত্যহিক জীবনের সাথে যদি কুরআনকে মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করে ফেলতে চান, যদি জীবনটাকে সাজাতে চান কুরআনের ছন্দ-সূত্র বা মূলনীতি মেনে, তাহলে আর এক পলকও দেরি করবেন না। খাটের কোণায় একটা সোনালি আলোর ল্যাম্প জ্বেলে নিয়ে, বালিশে হেলান দিয়ে এখনই ডুব দিয়ে দিন ‘জেগে ওঠো আবার’-এর রহস্য অরণ্যে—সেথায় কখনো মেঘ, কখনো রদ্দুর, আর কখনো বা জোছনা ফোটে।

লেখক বইটিকে এত চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন যে এই বইটি আপনার ঈমানি চেতনা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দিবে ইন শা আল্লাহ। লেখক তার এই বই সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন "আমি বিশ্বাস করি, বাংলা সাহিত্যে 'জেগে ওঠো আবার' বইটি একটু হলেও জায়গা করে নেবে"। এত সুন্দর শব্দ গঠন এবং ফরমেটিং পড়তে পড়তে মনের অজান্তে আপনি কবে যে হেসে ফেলবেন তা আপনি টের পাবেন না, মন যেন বলে উঠবে হ্যাঁ এটাই তো আমি খুজছিলাম। বইটি আমাদের দেশের প্রতিটি তরুণ-তরুণীর হাতে-ই থাকা উচিত।

জীবনের কঠিন বাস্তবতা ভুলে যারা দুনিয়ার মোহে যারা গা-ভাসিয়েছেন এবং সেই মোহে আচ্ছন্ন হয়ে যাদের অন্তরে মরিচা পড়ে গেছে, কলুষতায় ছেয়ে গেছে যাদের ভেতর বাহির—তাদের মরিচা পড়া অন্তরকে জাগিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে পয়গাম খোঁজা হয়েছে ‘জেগে ওঠো আবার’ বইয়ের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়। আল্লাহর নির্দেশিত সফলতাকে না খুঁজে আমরা দুনিয়াবি প্রাচুর্যের সফলতা খুঁজতে গিয়ে এক অন্ধকারে হারিয়ে যাই। সেই অন্ধকার থেকে ফিরে আসতে সহায়ক হতে পারে 'জেগে ওঠো আবার' বইটি।