শায়খ আহমাদুল্লাহ এর লেখা বই সমূহ | All books written by Sheikh Ahmadullah

শায়খ আহমাদুল্লাহ এর লেখা বই সমূহ | All books written by Sheikh Ahmadullah

শায়খ আহমাদুল্লাহ এর পরিচয়

শায়খ আহমাদুল্লাহ একজন বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও বিদগ্ধ আলোচক। বাংলাদেশের যে কজন আলেম দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বময় পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

শায়খ আহমাদুল্লাহ ১৫ই ডিসেম্বর ১৯৮১ সালে লক্ষীপুর জেলার বশিকপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেন বশিকপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ভর্তি হন কওমী মাদরাসায়। নোয়াখালীর একাধিক মাদরাসায় কয়েক বছর পড়ালেখা করার পর তিনি ভর্তি হন হাতিয়ার ঐতিহ্যবাহী ফয়জুল উলূম মাদরাসায় এবং সেখান থেকে মুতাওয়াসসিতাহ (SSC) করেন। সেখানে তিনি আলেমে দীন মুফতী সাইফুল ইসলাম (রহ.)-এর সান্নিধ্য লাভ করেন। এরপর তিনি দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারী মাদারায়, চট্টগ্রাম এ ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১০ম স্ট্যান্ড সহ সানুবিয়াহ (HSC), (ফযীলত) স্নাতকে তৃতীয় স্থান ও ২০০১ সালে দাওরায়ে হাদীসে সম্মিলিত মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। পরবর্তীতে তিনি খুলনা দারুল উলুম থেকে ইফতা বা মুফতি কোর্স কমপ্লিট করেন।

শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি মিরপুরের দারুর রাশাদ নামক একটি মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং প্রথম দিন থেকেই তিনি নাজেমে দারুল একামা পদে ভূষিত হন।

সেখানে তিনি ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এর মাঝে এক বছর তিনি মিরপুরের আরজাবাদ মাদরাসায় হাদীসের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। এই চাকরীর পাশাপাশি তিনি দীর্ঘ সময় মিরপুরের বায়তুল ফালাহ নামক জামে মসজিদ ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৯ সালে তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন। বিশেষ দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়ার মাধ্যমে তিনি ডাক পান মধ্যপ্রাচ্যে। সেখানে গিয়ে তিনি যোগ দেন সৌদি আরবের পশ্চিম দাম্মাম ইসলামিক দাওয়াহ সেন্টারে। সেখানে তিনি একজন দাঈ ও অনুবাদক হিসেবে যোগ দেন ও দীর্ঘ ৯ বছর সেখানে তিনি এই কাজ চালিয়ে যান। সেখানে থাকাকালীন তিনি বিভিন্ন ভাবে আর্তমানবতার সেবায় এবং বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাঝে ইসলামের জ্ঞান পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

তবে নিজের দেশের মানুষের মাঝে দ্বীন প্রচার করা ও বিভিন্ন সমাজ কল্যান মূলক কাজে অংশগ্রহন করার ইচ্ছা থেকে তিনি বেশ কিছু বছর আগে সেখান থেকে দেশে ফিরে আসেন।

বর্তমানে তিনি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে ইসলামিক বিষয়ে লেকচার প্রদান করা, নানামুখি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করা, উম্মুক্ত ইসলামি প্রোগ্রাম ও ইসলামি প্রশ্নোত্তরমূলক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করা এবং গুটি কয়েক টিভি অনুষ্ঠানে সময় দেওয়াসহ বহুমুখি সেবামুলক কাজে এই গুণী আলেমেদ্বীন জড়িত রয়েছেন।

এসব ছাড়াও বেশ কয়েক বছর যাবত তিনি প্রান্তিক পর্যায়ে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল এ যোগদান করার মাধ্যমে তিনি মাঠে ময়দানে দ্বীন প্রচার করার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন।

বিভিন্ন দাওয়াতি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই তিনি বিভিন্ন দেশ যেমনঃ জাপান, ভারত ও আরব আমিরাত সফর করেছেন এবং একাধিক আন্তর্জাতিক ইসলামিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।

ইসলাম নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি তিনি লেখালেখিও করে থাকেন। তার লেখা ‘রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সকাল সন্ধ্যার দু’আ ও যিকর’ বই এবং ‘পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত পরবর্তী দু’আ ও যিকর’-এর কার্ড এ যাবত প্রায় কয়েক লক্ষাধিক কপি বিতরণ করা হয়েছে। প্রায় সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে তার লেখা প্রকাশিত হয় । আরবি ভাষাতেও তার বিভিন্ন লেখা প্রকাশিত হয়েছে।

বিভিন্ন সমাজ কল্যাণ মুলক কাজে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা থেকে তিনি প্রতিষ্টা করেন "আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন" নামে একটি ফাউন্ডেশন।

শিক্ষা, সেবা ও দাওয়াহ—তিন বিভাগে তার এই ফাউন্ডেশন এর সমস্থ কাজ গুলো পরিচালিত হয়ে থাকে। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শায়খ আহমাদুল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবনাদর্শের আলোকে

  1. দেশজুড়ে সমাজের তুলনামূলক উপেক্ষিত মানুষদের মাঝে প্রাতিষ্ঠানিক ও উপ-প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইসলামী ও সাধারণ শিক্ষা ও কাজের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ,

  2. মানবতার সেবা এবং

  3. দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মধ্যে তার নিজের নামে একটি অফিসিয়াল ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজঅয়েব সাইট, ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের নামে ফেইসবুকে একটি অফিসিয়াল ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ, ওয়েব সাইট রয়েছে।

এসকল মাধ্যম গুলো ব্যবহার করে তিনি কোরআন ও হাদিসের উপর গবেষণা লব্ধ ভিডিও দ্বারা ইসলামকে সাধারন মানুষের মধ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করেন।

তিনি অন্যান্য বক্তাদের মত সুর করে আলোচনা করেন না, তবে তার গবেষণাধর্মী আলোচনার কারণে তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেশে বিদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সকাল সন্ধ্যার দু’আ ও যিকর

'রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দুয়া ও যিকর' এর প্রিন্টেড এবং সফট কপি উভয়টিই আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন কর্তৃক অফিসিয়াল ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এই বইটি প্রথমে শুধু ফ্রিতে বিতরণের জন্য প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে এটি খুবই স্বল্প মূল্যে বিভিন্ন লাইব্রেরিতে ও অনলাইন সপ গুলোতে পাওয়া যাচ্ছে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সকাল সন্ধ্যার দু’আ ও যিকর

একই সাথে শায়খ আহমাদুল্লাহ এখনো বইটি ফ্রি তেও বিতরণ করে থাকেন তার বিভিন্ন প্রোগ্রামে। এর পাশাপাশিস এর পিডিএফ ভার্সনটিও আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন কর্তৃক তৈরিকৃত এবং ফ্রিতে বিতরন করা হচ্ছে।

বইটিতে শায়খ আহমাদুল্লাহ যিক্‌রের গুরুত্ব, যিক্‌র ও দু'আর সর্বোত্তম সময়, সকাল ও সন্ধ্যার দু'আ কখন করতে হবে, অন্য যেকোনো কাজে ফাঁকে দু'আ করা যাবে কী না তার উত্তর, ওযু ছাড়া দু'আ এবং যিকর করার বিধান কী তার উত্তর, মাসিক ও নেফাস অবস্থায় যিক্‌র ও দু'আর বিধান বিষয় গুলোর সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও উত্তর প্রদানের পাশাপাশি সকাল এবং সন্ধ্যার অনেক গুলো দু'আ এবং কোন দু'আ কতবার পড়তে হবে এবং এগুলো সনদ কী? এসকল বিষয় গুলো খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন।

আমাদের সমাজে কিছু কিছু সকাল সন্ধ্যার দোয়া ও যিকর ব্যাপকভাবে পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও গ্রহণযোগ্যতার দিক দিয়ে এগুলো নিয়ে মুহাদ্দিসগণের বিস্তর আপস্তি থাকায় সেগুলো এই বইটিতে আনা হয়নি। এই বইটিতে উল্লেখিত দুয়া গুলোর বিশুদ্ধতার ব্যাপারে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে এবং এরই ধারাবাহিকতায়- যেসব দুয়ার বিশুদ্ধতা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, সেসকল দোয়া ও যিকরের মধ্যে শুদ্ধতার পাল্লা ভারি এমন কিছু দুয়া এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরো একটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- যাদের সরাসরি আরবী পড়তে কষ্ট হয় তাদের সহায়তার জন্য বাংলা উচ্চারণ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে যেহেতু, কোন ভাষার যথার্থ উচ্চারণ অন্য ভাষার অক্ষর দিয়ে পরিপূর্ণ রুপে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। বরং সেক্ষেত্রে বিকৃতির আশংকাই বেশি থাকে তাই এটা খুব বেশি উপকারী হবে এটা বলা যায় না। সুতরাং বাংরা উচ্চারণের ওপর নির্ভর না করে পাঠকদের উচিত মূল আরবী উচ্চারন শেখার ক্ষেত্রে সচেষ্ট হওয়া।

বইটিতে বাংলা উচ্চারন এর ক্ষেত্রে আরবী বর্ণ হা’ এবং আ’ইন বুঝানোর জন্য ঊর্ধ্ব কমা (’) এবং মাদ বোঝানোর জন্য (-) ব্যবহার করা হয়েছে যাতে করে পাঠকের জন্য তা বুঝতে সহজ হয়। পাঠক প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা বইটিতে প্রদত্ত দোয়া ও যিকর গুলোর আমল করলে তা ধিরে ধিরে তার অভ্যাসে পরিণত হবে যা তার দুনিয়ে ও আখিরাতের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে ইন শা আল্লাহ।



উমরাহ কীভাবে করবেন?

আল্লাহর ঘর বাইতুল্লাহর যিয়ারত ও রসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর মাকবারার সামনে দাঁড়িয়ে সালাম নিবেদন প্রত্যেক মুমিনের সারাজীবনের একটি লালিত স্বপ্ন। উমরাহর মাধ্যমে একজন মুমিন বান্দা তার কাঙ্ক্ষিত এই স্বপ্ন খুব সহজেই পূরণ করতে সক্ষম হন।

বাজারে হজ বিষয়ক অনেক বই পাওয়া গেলেও শুধু উমরাহ সম্পর্কিত বাংলা ভাষায় স্বতন্ত্র ভালো কোনো বই খুব বেশি একটা দেখা যায় না। হজ্ব সম্পর্কিত বই গুলোতে যৌথভাবে হজ্ব ও উমরাহ সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করা হয়। যার ফলে বই গুলো তুলনা মুলক বড় এবং সেই বইগুলো থেকে উমরাহ করতে চাওয়া লোকদের তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো খুজে নিতে হয়।

যেহেতু, উমরাহ করার জন্য হজ্বের সকল নিয়ম কানুন জানা আবশ্যক নয় তাই এত বড় বই গুলো পড়ার কোনো যুক্তি নেয়। তাছাড়া এমনটা করা একজন সাধারন মানুষের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই কষ্টসাধ্য হতে পারে। এই সমস্যা সমাধান করার লক্ষ্যেই শায়খ আহমাদুল্লাহ যারা শুধু উমরাহ সম্পর্কে জানতে চান, তাদের জন্য উমরাহর পদ্ধতি নিয়ে একটি ছোট পুস্তিকা চিন্তা ভাবনা করেন।

উমরাহ কীভাবে করবেন?

সেই চিন্তারই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে তার এই পুস্তিকা—উমরাহ কীভাবে করবেন। তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন যখন হজ্ব প্রশিক্ষণের ঘোষণা প্রদান করে এরপর তারা সিদ্ধান্ত গ্রহন করে আল্লাহর ঘরের মেহমানদের হাতে 'এক নজরে হজ্ব' শিরোনামে একটি লিফলেট এবং 'উমরাহ কীভাবে করবেন' নামে একটি পুস্তিকা তুলে দেওয়ার।

এই পুস্তিকার শেষাংশে লেখক আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) এর এমন কিছু দোয়া অর্থ ও উচ্চারণসহ সংকলন করেছেন, যেগুলো আয়তনে অনেক ছোট হলেও ব্যাপক অর্থ বহন করে এবং এগুলোতে দুনিয়া ও আখিরাতের সমূহ কল্যান চাওয়া হয়েছে।

হজ্ব ও উমরাহ তে দোয়া কবুলের অনেক গুলো জায়গা থাকে সেই জায়গা গুলোতে আল্লাহর কাছে আমরা মনের যে কোনো চাওয়া নিবেদন করতে পারি, নবী কারীম (সাঃ) এর শেখানো মাসনুন দোয়া গুলো সেখানে নিবেদন করার সুযোগ আমরা পাই।

দোয়া কবুলের সেসব জায়গা যেমনঃ তাওয়াফের সময়, সাফায়, মারওয়ায় ও অন্যান্য দোয়া কবুলের জায়গা গুলোতে এই দোয়া গুলো আমরা পাঠ করতে পারি।

এই বইটি পাঠের মাধ্যমে একজন উমরাহর যাত্রী উমরাহর পরিপূর্ণ পদ্ধতি, যাবতীয় বিধি-নিষেধ ও অর্থবোধক অনেকগুলো দোয়া সম্পর্কে খুব সহজে জানতে পারবে যা তার উমরাহ যাত্রা কে আরো বেশি অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করে তুলবে ইন শা আল্লাহ।



তারাবীহর সালাতে কুরআনের বার্তা

মানব জাতির প্রতি আল্লাহর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে কুরআনুল কারীম। কুরআন আমাদের পথ দেখায়। কুরআন আমাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে আসতে এবং নিজের জীবনকে আলোর পথে পরিচালিত করতে পথনির্দেশক হিশেবে কাজ। কুরআন হচ্ছে মানব জীবনে সত্যিকারের উন্নতি-অগ্রগতির একমাত্র মাধ্যম। কুরআনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের বেশিরভাগ মানুষের কুরআনের সাথে তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।

তারাবীহর সালাতে কুরআনের বার্তা

রমজান মাস হচ্ছে কুরআন নাযিলের মাস। এই মাসেই আল্লাহ তা'আলাহ আমাদের নবী (সাঃ) এর ওপর মহা গ্রন্থ আল কুরআন নাজিল করেন। আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) প্রতি রমাদান মাসে জিবরীল (আঃ) এর সাথে কুরআন শোনাশুনি করতেন। আমরা অনেকে রমাদানে কুরআন তিলাওয়াত করে থাকি এবং পুরো কুরআন খতম তুলে থাকি। এমনকি অনেকের মাঝে এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব লক্ষ করা যায়। এ বিষয় টা এক দিক দিয়ে ভালো হলেও অন্য দিক দিয়ে বিবেচনা করলে খারাপ। কেননা আমরা কুরআন খতম করার চিন্তায় বিভোড় থাকার ফলে কুরআন বুঝে পড়ার প্রতি মনোযোগী হতে পাড়ি না।

এছাড়াও আমরা রমাদানে সবচেয়ে বেশি কুরআনের সান্নিধ্যে আসতে পাড়ি তারাবীহতে। তারাবীহর সালাতে কুরআনের হাফেজদের সুললিত কণ্ঠের তিলাওয়াত আমাদেরকে মুগ্ধ করে, অন্তরকে প্রশান্ত করে। কিন্তু কষ্টের হলেও সত্যি, তারাবীহর তিলাওয়াতে আল্লাহর কালাম আমাদেরকে কী নির্দেশনা দেয়, তা আমরা অধিকাংশ মানুষই বুঝতে পারি না। যার ফলে আমরা পুরো কুরআনের তেলাওয়াত শুনি ঠিকই কিন্তু তা আমাদের অন্তর কে নাড়া দেয় না। আমাদের চিন্তা শক্তি কে জাগ্রত করে না।

তারাবীহর সালাতে কুরআনের বার্তা বইটির মাধ্যমে শায়খ আহমাদুল্লাহ এই অভাবমোচনের একটি প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। আমরা যারা এক মাস তারাবীহর সালাত আদায় করি তারা যদি তিলাওয়াতের মাধুর্য উপভোগের পাশাপাশি তার মর্মও অনুধাবন করতে পারি, উপলব্ধি করতে পারি যে আল্লাহ আমাদের কি বলছেন কুরআনের মাধ্যমে — তাহলে আমাদের তারাবির নামাজ টুকু পরম অর্থবহ এবং অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক হয়ে উঠবে।

আমাদের দেশে প্রায় সব মসজিদে সাতাশ রোজার আগের রাত অর্থাৎ সাতাশ তারাবীহতে কুরআন খতমের প্রচলন লক্ষ করা যায়। সে হিসেবে লেখক বইটিতে পুরো কুরআন কে সাতাশ ভাগে ভাগ করে প্রতিদিনের তারাবিতে পাঠ করার কুরআনের অংশগুলোর দ্বারা সাতাশ টি অধ্যায় দ্বারা বইটিকে সাজানো হয়েছে।

প্রতিটি অধ্যায় এ প্রতিদিনের তারাবীহতে পঠিতব্য অংশের ঘটনাবলি, ঈমান-আকীদা, আদেশ-নিষেধ, হালাল-হারাম, দৃষ্টান্ত, দোয়া, নবি-রাসুলদের ওপর বিভিন্ন পরীক্ষা, কাফের-মুশরিকদের বর্ণনা, হজ, জিহাদ, জান্নাতিদের বৈশিষ্ট্য, জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা, সাহাবি ও মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য, ওহুদ, খন্দক ও বদরের যুদ্ধ, জিন, সুরার ফজিলত, কিয়ামত, সালাত, সাওম, জাকাত, শিরক, কুফর, ইত্যাদি সহ কুরআনের সকল গুরুত্বপূর্ণ আয়াতসমূহের নির্যাস তুলে ধরার মাধ্যমে পুরো কুরআনকে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপণ করার চেষ্টা করেছেন এই বইটিতে।

এ ছাড়াও আজকের শিক্ষা নামে সংশ্লিষ্ট পারার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষনীয় বিষয়গুলো তুলে আনা হয়েছে।

একজন পাঠক যদি তারবীহর সালাতে যাওয়ার আগে অথবা পরে যদি সেদিনের তারাবীহর পঠিতব্য অংশ টুকুর বিশ্লেষন কেউ নিয়মিত পড়তে পারেন, আশা করা যায়, মাস শেষে তিনি পুরো কুরআন সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পেয়ে যাবেন।

এই বইটির নামে যদিও তারাবির সালাত কে উল্ল্যেখ করা হয়েছে, এবং বইটি যদিও বিশেষ ভাবে লিখা হয়েছে রমাদান ও তারাবির সালাত কে মাথায় রেখে কিন্তু তার মানে এই নয় যে বইটি শুধু রমাদান মাসেই পড়তে হবে।

এই বিশেষ বইটি রমাদান বা তারাবীহর বাইরেও কুরআনের সারমর্ম অনুধাবন, কুরআন কে নিজের মধ্যে প্রতিষ্টা করা ও কুরআনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, ইনশাআল্লাহ।



রমাদান প্ল্যানার

রমাদান মাস হচ্ছে আত্মশুদ্ধির মাস। আমাদের নিজেদের পাপ গুলোর জন্য ক্ষমা চেয়ে জিবনকে নতুন ভাবে গুছানোর মাস। রমাদান মাসে পুরো এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করি।

রমাদান প্ল্যানার

তাই রমাদান কে ঘিরে প্রতিটি মুসলমানের থাকে আলাদা কিছু প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সকলেই একটা পরিপূর্ণ পরিকল্পনা বা প্ল্যানের মধ্য দিয়ে যেতে পারি না। রমাদানের প্রতিটি দিনকে কিভাবে আরো বেশি ফলপ্রসূ করে তোলা যায়, কিভাবে প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতের মধ্যে কাটানো যায় ইত্যাদি বিষয় গুলো একটি সুন্দর প্ল্যানের মধ্যে আনা গেলে বিষয় গুলো মেনে চলা অনেকটায় সহজ হয়ে যায়। এই প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে শায়খ আহমাদুল্লাহ তার রমাদান প্ল্যানার টি নিয়ে আসেন।

এই প্ল্যানারে রয়েছে রমাদান মাসব্যাপী আত্মশুদ্ধি লাভের একটি পরিপূর্ণ পরিকল্পনা। প্ল্যানারটির উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ হলো দিনের আয়াত, দিনের হাদিস, দিনের দুআ, দৈনিক চেকলিস্ট। এছাড়াও রয়েছে আল্লাহর গুণবাচক নাম ও প্রতিদিনের কাজ। যার ফলে পাঠক খুব সহজেই প্রতিদিন একটি করে কুরআনের আয়াত, একটি হাদিস এবং একটি করে দুআ মুখস্ত করতে পারবেন।

প্ল্যানারটির মাধ্যমে একজন পাঠক রমাদানে কোন কাজটা কখন করবেন, তার সময়ানুযায়ী খুব সহজেই তা ভাগ করে নিতে পারবেন এবং সেই ভাবে আমল করতে পারবেন।

এছাড়া এতে রয়েছে সালাত ট্র্যাকার, কুরআন ট্র্যাকার, প্রতিদিনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিসমূহ ট্রাক করার সুযোগ সহ আরও এরকম গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু।

এটি যেহেতু রমাদান প্ল্যানার সেহেতু একজন পাঠক তার প্রতিদিনের নামাজ, দোয়া ও অন্যান্য আমাল গুলো ট্রাক রাখার জন্য সেগুলোর জন্য বরাদ্দ খালি ঘর এ টিক চিহ্ন দিবে এতে করে সে তার আগের দিন কি করেছে এবং কি করতে পারে নি তা দেখে নিয়ে নিজেকে আরো বেশি ইবাদত করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারবে।

আরেকটা বিষয় হলো দাগানোর ফলে পুরো রমাদান শেষে সেইটি আর পরবর্তী রমাদানে ব্যবহারের উপযোগী থাকবে না তাই এটি একবার এক রমাদানে কিনলে পরবর্তী রমাদানে আবার কিনতে হবে। এর একটি সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে পাঠক তার পূর্ববর্তী রমাদান এ কি রকম আমল করেছে ও বর্তমান রমাদানে নিজেকে কতটা পরিবর্তন করতে পেরেছে তার একটি চিত্র দেখতে পারবে।